বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ধনেশ পাখি

এটা না বললেই নয়। এর আগে অন্যত্রও একবার বলেছি।

আমাদের সঙ্গে কলেজে পড়ত অসীম। অসীম দাস। সত্যি নামটা বলছি না। অসম্ভব আমুদে ছেলে। এবং কালারফুল। সেইসঙ্গে দারুণ হাজির-জবাবের ক্ষমতা। আর ছিল মজার-মজার এবং ইনোভেটিভ গালাগালির অফুরন্ত স্টক। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে মুজতবা আলী, স্নেহাংশু আচার্য - এইসব দিকপালদের উত্তরসুরী সে। অসীম ছাড়া কোন আড্ডা, বেড়াতে যাওয়া-টাওয়া ঠিকমতন জমত না। কলেজে একদিন না এলে ফাঁকা-ফাঁকা লাগত। কলেজের ফাইনাল ইয়ারে গোয়া বেড়াতে গিয়ে এক রাত্তিরে লাস্ট-বাস মিস করে ভ্যাগেটর বিচ থেকে সাড়ে তিনঘন্টা হেঁটে ক্যালাঙ্গুটের ডর্মিটরিতে ফিরতে হয়েছিল আমাদের জনা পনেরোকে। তার মধ্যে আদ্দেক রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে। সেই পুরো রাস্তাটা অসীম আর আমাদের আরেক বন্ধু নন-স্টপ গালাগালির কম্পিটিশন শোনাতে শোনাতে নিয়ে এসেছিল। 

অসীম ছিল প্রেমিক। সম্ভব-অসম্ভব বিভিন্ন রকমের প্রেমে অতি দ্রুততার সঙ্গে পড়ে যাওয়ায় অসীমের কোন জুড়ি ছিল না। কিন্তু সেগুলো সবই একতরফা। ফলে একটা প্রেমও শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। হবে কী করে? বন্ধুদের কাছে অতি সরব হলেও, যেখানে আসল কথাটি বলার - সেখানে একেবারে সাইলেন্ট। কিন্তু তার জন্যে অসীম যে দেবদাস-পানা “আমি রব নিষ্ফলের হতাশের দলে” হয়ে বসে থাকবে, সেরকম কোন সিনই নেই। অত্যন্ত স্পোর্টিং প্রেমিক ছিল সে। আর ওইসব উচাটনও দিন কয়েকের মধ্যে মানবমনের গভীরে বিলীয়মান হয়ে যেত।

তো এমতাবস্থায় একদিন অসীম চৈতালী (কাগজের ভাষায়, নাম পরিবর্তিত) বলে তাদের হাউজিং-এর একটি মেয়ের প্রেমে পড়ল। পড়ল মানে একেবারে পড়েই রইল। আমরা ইউনিভার্সিটিতে ঢুকলেই কম্পালসারিলি অসীমের প্রেমের প্রোগ্রেস রিপোর্ট শুনতাম আর নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি মতন পরামর্শ দিতাম। যেমন অসীম বলল, 'আজ মাইরি হাউজিং-এ ব্যাডমিন্টন খেলছিল চৈতালী। কতক্ষণ আর ডাইরেক্টলি ঝাড়ি করা যায়! তাই ছক করে ওর ভাইকে ডেকে ধনেশ পাখি দেখালাম"। ধনেশ পাখি? বেহালার হাউজিং-এ? দেখিয়েছে হয়তো চড়াই। অসীম বলল, "চৈতালীর ভাইকে বলার জন্যে এই নামটাই সবথেকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে হল।" একদিন হয়তো বলল, "একটা ছেলে শালা চৈতালীকে ছক করছে। কী করা যায় বল তো?" অমুকে বলল, “বেনামী চিঠি দে।” একজন বলল, “তক্কে-তক্কে থাক। একদিন বাসে দেখতে পেলে পকেটমার বলে কেলিয়ে দিবি।” এইরকম চলছে।

এক সেমেস্টার পরীক্ষার সকালে কলেজে গিয়ে দেখি অসীমের মেজাজ পুরো বিলা। দেবদুলালীয় শোকবার্তা স্টাইলে ঘোষণা করল, "কাকা, আজ সব শেষ।” “সে কী?” অসীমের বয়ানে - “সকালে শালা এমনিই মেজাজ খারাপ - সেমেস্টারে ৩২ আস্কিং - বাজার থেকে ফিরছি, চৈতালীর বাপ ধরেছে। রোজই ধরে, আর রোজই এক প্রশ্ন। কি অসীম, বাজার থেকে ফিরছ নাকি? বাঁ... দেখছ সক্কালবেলা হাতে থলি, বাজার থেকে ফিরব না তো কি বেশ্যাবাড়ি থেকে ফিরব? তাও চৈতালীর বাপ তো, গম্ভীর হয়ে বললাম, হ্যাঁ বাজার। তখন বলে কেমন বাজার হল? বাজার আবার বালের কেমন হবে? বললাম, ভালোই। মাছ কিনেছো? হ্যাঁ। তখন জিগেস করে, কী মাছ কিনলে। আমার বাঁ ... আজ অ্যায়সা মটকা গরম হয়ে গেল, বলে দিয়েছি, বড় বড় তিমিমাছ কিনেছি। সস্তায় দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি যান। এখনও আছে।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন