শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

বাংলা স্কুল

ছ বছর বাংলা বয়েজে পড়ে যখন বাংলা কো-এডে ভর্তি হলাম তখন আমি নেহাতই আনকোরা। একেবারে গ্রীন। প্রথম দিনই ক্লাসের বাঘা বাঘা ছেলেরা ইন্টারভিউ নিল। কোন স্কুল থেকে এসেছি, ক্লাসে কটা মেয়ে ছিল, নিরোধ কি, সত্যম শিবম সুন্দরম দেখেছি কিনা - এইসব। তারপরে গালাগালির ইন্টারভিউ। সে সব তো পাশ করে গেলাম। টিফিনের সময়ে লাইব্রেরির সামনের মাঠে রবারের বলের ফুটবল দলে চান্সও পেয়ে গেলাম। কো-এড ইশকুলের জীবন শুরু হয়ে গেল। সত্যি বলতে কি বয়েজ স্কুল আর কো-এড স্কুলের পার্থক্য কখনই প্রকট হয়নি।

তবে জাগতিক ব্যাপারে একেবারে উদোমাদাচন্ডীচরণ ছিলাম না। বার্ডস-অ্যান্ড-দ্য-বীজ সম্বন্ধে সবাইকারই জানাশোনা ছিল। তবে তার থেকে অনেক বেশি মুখরোচক ছিল গাভাসকার-বিদেশ বসু-এন্টার-দ্য-ড্রাগন। আর ছিলেন মিস্টার বচ্চন। 'অনুসন্ধান' এসে গেছে, 'শান' আসব-আসব করছে। বহু ছেলে 'আমি বলছিলাম কি' বলে অনুসন্ধান-স্টাইলে কথা বলা শুরু করছে। এসে গেছে সুখেন দাসের অমর ছবি 'প্রতিশোধ'। চিত্রমালায় দেখেছি বাস-থেকে লাফিয়ে ধানক্ষেতে নেবেই সুখেন দাস গান ধরেছেন 'হয়ত আমাকে কারো মনে নেই'। মাইকে বাজছে 'ইয়াম্মা ইয়াম্মা'।

মেয়েরাও ছিল। পেরিফেরাল ভিশনে। ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব হল অনেক পরে। সেভেন-এইট অব্দি ছিল মূলতঃ ঝগড়ার সম্পর্ক। অরূপের বাবা পুলিশে কাজ করতেন। পুলিশি ঐতিহ্যে অরূপ সারাটা স্কুল-জীবন অ্যায়সা মোটা সোলের সবুজ ক্যানভাসের জুতো পরে এল। সেই জুতো পরে অরূপের ফুটবল খেলা বারণ ছিল। চার্জ করা যেত না। ক্লাস সেভেনে একবার সঙ্ঘমিত্রার সঙ্গে অরূপের ঝগড়া লাগল। ঝগড়া থেকে লাথালাথি। ওই জুতো পরে। আমরা ছেলেরা অরূপকে উৎসাহ দিলাম। মেয়েরা সঙ্ঘমিত্রাকে। তারপরে ভুলে গেলাম।

দুপুরে সবদিন ফুটবল খেলা যেত না। বল থাকত না বা মাঠ পাওয়া যেত না। সেসব দিন আমরা কিং-কিং বা চোর-পুলিশ খেলতাম। চোর-পুলিশ হলে পেছনের অডিটোরিয়ামের ছাতে। সিঁড়ির ভাঙা কাঁচের জানলা দিয়ে গলে। সেই ছাতেই ছিল স্কুলের জলের ট্যাংক। শৈবাল একদিন ট্যাংকে হিসি করে দিল। আমরা পরের সাতদিন কেউ স্কুলে জল খেলাম না। খুব তেষ্টা পেলে সামনে বারিকদের বাড়ির প্যাসেজের কল থেকে গিয়ে জল খেয়ে আসতাম। স্কুলের বাকি কেউ জানত না। অন্যরা হুহা সেই জলই খেল। স্টুডেন্ট-টীচার-হেডু সবাই।

এই করতে করতে একদিন হঠাৎ দেখি, বড় হয়ে গেছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন