শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬

আয়না, ঝর্ণা ও রাহুল

চার-পাঁচ বছরের স্মৃতি মনে থাকার কথা নয়। নেইও। তাও হঠাৎ স্মৃতির দু-চারটে ঝলক চলে আসে। সেইরকম কিছু ঝলক থেকে হয়ত বানিয়ে বানিয়ে পোক্ত স্মৃতি বানিয়ে নিয়েছি। সেইরকমই গানের স্মৃতি। ছেলেবেলার, মানে ওই বয়েসের, গান-সম্বন্ধীয় মাত্র দুটো স্মৃতি আছে আমার।

একটা হল, আমাদের আমহার্স্ট স্ট্রীটের বাড়ির রান্নাঘরে পা ঝুলিয়ে বসে আছি আর বাইরে মাইকে বাজছে "কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে, প্রীত মেরি সচ্চি"।

দ্বিতীয় স্মৃতিটা মজার। পিশতুতো ভাইবোনেরা এসেছে ছুটিতে। বাংলায় স্নো-হোয়াইট নাটক করা হচ্ছে। সত্যেন দত্তর একটা কবিতা আছে - 

ঝর্ণা, ঝর্ণা, সুন্দরী ঝর্ণা।
তরলিত চন্দ্রিকা
চন্দন-বর্ণা।।

এর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে স্নো-হোয়াইটের জন্যে সেজকাকাই বোধহয় লিখে দিলেন -

আয়না, আয়না, সুন্দরী আয়না
সব থেকে সুন্দরী
কে আমায় বলনা।

মনে আছে, এটা আমরা গলা ছেড়ে একটা মিষ্টি সুরে গাইতাম। সুরটা এতই মিষ্টি আর সোজা যে সেটাকে অনেকদিন বয়ে বেড়াতে পেরেছি।

এর অনেকদিন পরে, ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি বোধহয়, একদিন চিত্রহারে হঠাৎ একটা গান শুনে চমকে উঠলাম। আরে, এই তো সে আয়নার গান। ওরফে ঝর্ণার গান। কিশোরকুমার গাইছেন -

রোনা, কভি নহি রোনা
চাহে টুট যায়ে
কোই খিলোনা।



সুরটা শুনে দেখুন। তারপরে সেই সুরে "ঝর্ণা, সুন্দরী ঝর্ণা" গান, দেখবেন খাপে খাপ মিলে গেছে।

কিন্তু সেটা কথা নয়। কথা হল, ছেলেবেলার যে গান মনে রয়ে গেল, বোধহয় অবচেতনেই, সে গানদুটোই গেয়েছিলেন কিশোরকুমার আর, মনে হয় তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, দুটোই সুর করেছিলেন রাহুল দেব বর্মণ।

সায়েবরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন শিশু, মানে একেবারে কয়েকমাসের শিশুদের ওপর মোৎজার্টের সঙ্গীতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে।

তবে কি রাহুলেরও আছে?