মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১৬

সেবোনিয়ার

সত্যজিৎ রায়ের একটা গল্পে হ্যামিলটনের মাঠ বাঙালি উচ্চারণে হামলাটুনির মাঠ হয়ে গেছিল। লেডি ক্যানিং থেকে লেডিকেনির নাম হওয়ার গল্প তো প্রায় সবাই জানেন, যদিও এখন সেই গল্প জিজ্ঞাসার চিহ্ণ পড়েছে। এছাড়া প্ল্যাটুন থেকে পল্টন, প্লায়ার্স থেকে প্লাস - এসব তো আছেই।

আমাদের কলকাতার বাড়িতে একটা চেস্ট-অফ-ড্রয়ার আছে। তার নাম সেবোনিয়ার। পল্টনেও তাকে নড়াতে পারে না, এমনই ভারী। আমি তাকে জন্মাবধি দেখে আসছি। চারতলা দেরাজ, আমরা টানা বলতাম। প্রত্যেক তলায় একটা সাড়ে তিন-চার ফুটের গভীর ড্রয়ার। সব থেকে ওপরের তলায় তার আদ্ধেক-চওড়া দুটো ড্রয়ার। আজকালকার মতন ফ্যান্সি রেল লাগান ফঙ্গবেনে জিনিস নয়। একদম সলিড। এক-একটা দেরাজ টেনে বের করতে কালঘাম ছুটে যায়। গামা পালোয়ান না লাগলেও সে যার-তার কম্ম নয়। সে কী আর আজকের জিনিস? বহু পুরনো। বোধহয় ওম্মার বিয়ের যৌতুক। মানে আদি উনিশশো ব্রিটিশ সালের মাল। বার কয়েক পালিশ করা সত্বেও আবার সে প্রায় আবলুশ কাঠের মতন কালো হয়ে গেছে। ছোট থেকে জিনিসটাকে "সেবোনিয়ার" বলে ডাকতে শুনেছি। আর কারুর বাড়িতে "সেবোনিয়ার" আছে বলে কোনদিন শুনিনি। নামটায় কীরকম যেন ফ্রেঞ্চ-ফ্রেঞ্চ গন্ধ। আমি থোড়িই ফরাসি জানি! ওই গন্ধ অব্দিই দৌড়। কাজেই জিনিসটার সত্যিকারের যে কী নাম জানতে পারিনি। তারপরে ভুলেও গেছিলাম। সেদিন মনে পড়াতে সার্চ করতে গিয়ে দেখি কোন আন্দাজী বানানেই কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে ঘুরপথে খুঁজে পেলাম। ফ্রেঞ্চই। chiffoniere। সেখানে থেকে ব্রিটিশ বা মার্কিনি chiffonier বা chiffonnier। বাঙালি উচ্চারণে শিফনিয়ের থেকে কীভাবে যেন সেবোনিয়ার হয়ে গেছে। (আসল ছবি নেই।)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন