রান্নাঘর

বিদেশে থাকার সময়ে বিভিন্ন মানুষের থেকে নিজের পছন্দসই রান্নার নিয়ম লিখেছিলাম । অধিকাংশই আটপৌরে রান্না । পাকা রাঁধুনীরা হয়তো এর সব রান্নাই জানেন - অল্পবিস্তর এদিক-ওদিক করে । কিন্তু আমার মতন গোলা লোকের পক্ষে কাজের হতে পারে ।

মুর্গির স্টু
কাঁকড়ার ঝোল
দই-মুর্গি
চিকেন হেলাফেলা
পাহাড়ি চিকেন
মাংসর চাঁপ

(ছন্দা বসুর নিয়মে)


মুর্গি - ১ কেজি ।
আলু - ২টো চার-খন্ড করে কাটা ।
আস্ত গরম মশলা - দালচিনি (ইঞ্চি দুয়েক), লবঙ্গ (৭-৮), ছোট এলাচ (৭-৮), গোলমরিচ (৭-৮)
আদাবাটা ।
পার্ল অনিয়ন - ৬টা, অভাবে বড় পেঁয়াজ - ১টা, চার টুকরো করে কাটা। 
পেঁয়াজ - ১টা কুচোনো ।
ফ্রেঞ্চ বিন - ১০টা, ১ ইঞ্চি করে কাটা।
গাজর - ২ টো - আধা ইঞ্চি করে কাটা।
কড়াইশুঁটি - আধ কাপ।
তেজপাতা।
টম্যাটো - ১টা, চার টুকরো করা।
কাঁচালংকা - ৪টে, কুচোনো।
নুন - তিন চা-চামচ।
ভিনিগার - দু টেবিল-চামচ।
কর্নফ্লাওয়ার অভাবে ময়দা - দেড় টেবিল-চামচ।
চিনি - ২ চা-চামচ।
দুধ - ২ টেবিল-চামচ।
মাখন - ইচ্ছেমতন।

সব্জি, মুর্গি, পার্ল অনিয়ন, নুন আর ভিনিগার দিয়ে প্রেসারে দিয়ে খুব ভাল করে সেদ্ধ করে নেওয়া হল। গরম তেলে তেজপাতা, গরম মশলা, কুচোনো পেঁয়াজ ভাজতে হবে যতক্ষণ না পেঁয়াজ স্বচ্ছ (translucent) না হয়ে আসে। তারপরে আদা, লঙ্কাকুচি দিয়ে অল্প নাড়াচাড়া করে কর্নফ্লাওয়ার ঢেলে দিতে হবে। আবার অল্প নাড়াচাড়া করে এবার মুর্গি, সব্জি-সেদ্ধ জল-শুদ্ধু সব ঢেলে ফোটান হল। সেই সঙ্গে দেওয়া হল চিনি। স্টু যখন টগবগ করে ফুটে মনের মতন ঘনত্বে আসবে তখন দুধ আর মাখন দিয়ে নাবিয়ে নাও।

কর্নফ্লাওয়ার তেলেও দেওয়া যায় আবার শেষে দুধে গুলেও দেওয়া যেতে পারে।

(জয়া বসুর নিয়মে)


কাঁকড়া ।
আলু, লম্বা করে কাটা ।
আস্ত গরম মশলা ।
থেঁতো করা আস্ত রসুন কোয়া ।
আদাবাটা ।
পেঁয়াজ কুচোনো ।
জিরে গুঁড়ো ।
হলুদ গুঁড়ো ।
লংকা গুঁড়ো ।
কাঁচা লংকা ।
নুন ।

কাঁকড়া ছাড়ানোর নিয়মটা এই রকম - কাঁকড়ার দাঁড়াগুলো হাত দিয়ে ছিঁড়ে নিতে হবে । যা পড়ে থাকবে সেটা গোলমতন কাঁকড়ার দেহ । মুখের কাছে ফুটোতে চাপ দিয়ে খোলটা আলাদা করে ফেলা যায় । এই পিঠের খোলই কাঁকড়ার একমাত্র অংশ যা রান্নায় যায় না । খোল খুলে ফেললে ভেতর থেকে ঘিলু ইত্যাদি যা বেরোবে, তা আলাদা করে বাটিতে রাখো । এরপর হাত দিয়ে - কাঁকড়া কত বড় তার ওপর নির্ভর করে - দেহ দুভাগ কী চার-ভাগ করে ফেল ।

আলু দিতে চাইলে, আলু লম্বাটে করে কেটে ভেজে আলাদা করে রেখে দাও ।

তেল গরম করে, তাতে আস্ত গরম মশলা ফোড়ন দাও । লবঙ্গ যখন ফুলে মোটাসোটা হয়ে গেছে, রসুন থেঁতো করে দাও । আর দাও কুচোনো পেঁয়াজ । পেঁয়াজের পরিমাণ বেশির দিকে রাখো । পেঁয়াজ ভাজো translucent করে । এটার জন্যে আমি যা করি তা হল পেঁয়াজ তেলে অল্প নাড়াচাড়া করে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রেখে দিই কিচ্ছুক্ষণ । বদ্ধ ভাপে পেঁয়াজ আধ-ভাজা আধ-সেদ্ধ হয়ে translucent হয়ে যায় । তেলের পরিমাণ খুব কম হলে এই পদ্ধতিই সেরা । তেলে বেশি দিলে অবশ্য সাধারণভাবে ভাজার একটা অবস্থাতেই পেঁয়াজ translucent হয়ে যায় ।

তো পেঁয়াজ translucent করে ভাজা হলে আদাবাটা দাও । আর দাও জিরে গুঁড়ো, লংকাগুঁড়ো, হলুদ আর নুন - জলে গুলে, থকথকে করে । এবার বাটিতে আলাদা করে রাখা কাঁকড়ার ঘিলু-টিলু যা পেট থেকে বেরিয়েছিল সেসব দিয়ে ভাল করে কষাও । কষানোর সময়ে আলুও দিয়ে দিতে হবে । কষানো হবার পরে, কাঁকড়ার বাকি যা আছে - দেহ, দাঁড়া ইত্যাদি সব ঢেলে দাও, দাও দু কাপ মতন ইষদুষ্ঞ জল, আর দাও চেরা কাঁচালংকা । ঝাল না হলে কিন্তু কাঁকড়া জমবে না । এবার আঁচ কমিয়ে অল্প নাড়াচাড়া করে রেখে দাও যতক্ষণ না কাঁকড়া সেদ্ধ হচ্ছে । এখানে বলে রাখা ভাল, কাঁকড়া কিন্তু এমন সেদ্ধ কোরনা যেখানে দাঁত দিয়ে দাঁড়া নি:শব্দে ভাঙা যায় । কাঁকড়ার শক্ত অংশ, যেগুলো খাওয়া হয় না, সেগুলো কিন্তু রান্নার পরেও কুড়মুড়ে থাকবে ।

দই-মুর্গি

(সুদীপ গুপ্ত-র নিয়মে)

দহি মুর্গ ? খাবেন ?

প্যাঁজ ভাজুন। তাপ্পর রসুন আদা লংকা ইস্তক দিয়ে ম্যারিনেড করুন। আমি সব সময়েই একটু টাবাস্কো সস আর থেঁতো সাদা গোলমরিচ দি। মাঝে মাঝে বার বি কিউ সস বা ওর্সেস্টায়ার সস ও দি। ঘন্টা দুয়েক কবিতা পড়ুন বা উল বুনুন।
তাপ্পরে এক বাটী দইএর মধ্যে ম্যারিনেড করা চিকেন গুলো দিয়ে আচ্ছা করে মাইক্রো ওয়েভে রাঁধুন।

ব্যাস। ব্যাস। আর কিস্‌সু না। হয়ে গ্যালো দহি মুর্গ। চিলড ভদকার সাথে খান।

চিকেন হেলাফেলা

(মিঠু বন্দোপাধ্যায়ের নিয়মে)

  1. হাড় ছাড়া অথবা হাড় সুদ্ধু যেকোনো চিকেন ছোট্‌মাপে টুকরো করে নিতে হবে।
  2. মাংসের মধ্যে দই আর নুন দিয়ে ঘন্টা খানেক ম্যারিনেট করে রাখতে হবে।( বেশি টক স্বাদের জন্যে লেবুর রস দিতে হবে)
  3. পাত্রে সাদা তেলের সঙ্গে মাখন ( শুধু মাখনেই বেশি ভালো গন্ধ হয় )গরম করে,আঁচ কমিয়ে দু চারটে গোটা গোলমরিচ থেঁতো করে ফোড়ন দিতে হবে( গন্ধের জন্যে)
  4. মাংস টা ঢেলে দিতে হবে,ভালো করে কষিয়ে,ঢাকা দিয়ে দিতে হবে,ঢিমে আঁচে মাংস সেদ্ধ হবে,জল না দেওয়াই ভালো।সেদ্ধ হয়ে এলে,খানিক টা ধনেপাতা মিহি করে কুচিয়ে মাংসে দিয়ে দিতে হবে।কিছুক্ষন রেখে আর একটু মাখন দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। যথেচ্ছ কাঁচা লংকা চিরে দেওয়া যাবে।শুকনো লংকা চলবে না।

দই এর বদলে সাওয়ার ক্রিম ব্যবহার করা যাবে।তাতে টক ভাব টা একটু বেশি হবে।


একটু ও ঝোল থাকবে না,গা মাখা মাখা হবে।

পাহাড়ি চিকেন

(আত্রেয়ী দাসগুপ্তর নিয়মে)

অনেকখানি দই আর রসুন, অল্প গরম মশলা গুঁড়ো, আর পরিমান মত নুন দিয়ে চিকেন ম্যারিনেড করে রাখুন। তারপর অল্প তেলে কিছু আস্ত এলাচ আর দারচিনি দিন, আবার একটু রসুন কুচি দিন, দিয়েই ঐ ম্যারিনেডেড চিকেন ঢেলে দিন। জল দেবার দরকার নেই, নেড়েচেড়ে ঢাকা দিয়ে দিন, নামাবার আগে প্রচুর পরিমানে ধনেপাতা কুচি। কাঁচা লংকা অপশনাল।
বেশ ভালো খেতে, চটপট তৈরি, তেল কম, রুটি, ভাত দুটো দিয়েই চলে। আবার কি চাই?
 

মাংসর চাঁপ

(আত্রেয়ী দাসগুপ্তর নিয়মে)

খুব সোজা মাংসের চাঁপ।

দোকানে গিয়ে মাংসওয়ালাকে বলতে হবে পসিন্দা কাবাবের মাংস দিতে। আর অভাগা হলে চিকেন-এর ব্রেস্ট টেন্ডার বা থাই দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে। মাংসর টুকরোগুলোকে নোড়া বা দিস্তা বা ভারী কিছু দিয়ে অল্প থেতো করে ফ্ল্যাট করে নিতে হবে।
অনেকটা পেঁয়াজ বেটে/গ্রাইন্ড করে নিন, বাটার সময় সঙ্গে দারচিনি ও এলাচ দেবেন।
এবার মাংসের মধ্যে এই জিনিসগুলো যোগ করতে হবে -
ঐ দারচিনি, এলাচ সহ পেঁয়াজবাটা
রসুনবাটা
দৈ
নুন
লংকাগুঁড়ো
অনেকটা সর্ষের তেল
পিঞ্চ হলুদ
সব কিছু ভালো করে হাত দিয়ে মাখুন এবার (হাতে না মাখলে কখনই সেই টেস্ট আসেনা)। সারাদিন বাইরে রেখে দিন। ঠিক রাঁধার আগে অল্প একটু গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে আবার মাখুন। এবার একটা তলা ভারী, ফ্ল্যাট বটম প্যান নিন। সর্ষের তেল ঢালুন। তেল গরম হলে ম্যারিনেড থেকে তুলে মাংসের টুকরো গুলো সিঙ্গল লেয়ারে সাজিয়ে দিন (এই সিঙ্গল লেয়ারটা ইম্পর্ট্যান্ট), এপিঠ ওপিঠ একটু হাল্কা বাদামী করে ভাজা হয়ে গেলে ওপর থেকে ঐ মশলা মাখা ম্যারিনেডটা দিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে, আঁচ কমিয়ে রাখুন। চিকেন হলে ১০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় সেদ্ধ হয়ে যায়। মাটন হলে অবশ্যই একটু সময় লাগবে। তবে জল দেবার দরকার হয়না। একটু মাখা মাখা, তেলওয়ালা হবে। রুটি, নান দিয়ে খাবার পক্ষে আদর্শ। সঙ্গে গোল চাকা পেঁয়াজ। প্লিজ নো ধনেপাতা এই রান্নায়।